পথে যেতে যেতে : পথচারী
- আপলোড সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ১২:৪৭:৫২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ১২:৪৭:৫২ পূর্বাহ্ন

আদিবাসী দেশের অনগ্রসর এক সম্প্রদায়। শুধু বাংলাদেশই নয় বিশ্বব্যাপী অধিকার ও সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এই মানুষগুলো। ৯ আগস্ট বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বের সাথে পালিত হলো বিশ্ব আদিবাসী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- ‘আদিবাসীদের ভূমি, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও উন্নয়নে অধিকার নিশ্চিত করা হোক।’
‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নৃ-গোষ্ঠী প্রসঙ্গ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন। পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম’ ও অন্যান্য সংগঠন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাচ, গান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিভিন্ন সংগঠন।
আমাদের দেশে আদিবাসীরা অনেক দিক দিয়েই উপেক্ষিত। তবে মাঝে মধ্যে কিছু প্রতিভাবান তাদের নানাবিধ প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তি হয়ে তাদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। তারপরও এই সম্প্রদায়ের মানুষগুলো সমাজে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সমাজের এই বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৩ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের এই উদ্যোগ গ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সারা বিশ্বের আদিবাসীদের মানবাধিকার, পরিবেশ, উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এই ৫টি বিষয়ে যে বৈষম্যের শিকার হয় তা দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ। জাতিসংঘের এই উদ্যোগ গ্রহণের পর প্রথম বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে ময়মনসিংহ শহরে মহাসমারোহে আদিবাসী বর্ষ পালন করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে আদিবাসীদের মনে চেতনা কাজ করতে থাকে। আদিবাসী বর্ষ পালন ঘোষিত হওয়ার পর অনেক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ কাজে তাদের নানা প্রকার কর্মসূচি সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়, ‘এথনিক কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন একডো, পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদ পাসকপ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘অক্সফাম’ আদিবাসী দিবস পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে আদিবাসীদের বসবাস। বিশেষ করে সিলেট জেলার সদর ইউনিয়নে ৩নং ও ৪নং খাদিমপাড়া এবং ৫নং টুলাটিকর ইউনিয়ন। জৈন্তাপুর ্উপজেলার ১নং নিজপাট ও ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন চিকনগুল। গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন এলাকায় আদিবাসীদের বসবাস। এ সকল এলাকার পাহাড়ি সীমান্ত ভূমিতে তাদের বাস। তারা হচ্ছেন- খাসি, পাত্র, বুনাজ, মাহালী, ওরাও, রউতিয়া, মহাতো, সাওতাল, কুর্মি প্রভৃতি। সিলেটের বাইরে ময়মনসিংহ এলাকায়ও কিছু আদিবাসী বাস করে থাকেন।
আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার অভাবে সচেতনতার অভাবও পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশে যে চার স্তর বিশিষ্ট প্রশাসনিক অবকাঠামো রয়েছে, তার সর্বনি¤œ স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমেই জনসেবা পরিচালিত হয়ে থাকে। অথচ এই আদিবাসীরা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম ও জনসেবা বিষয়ে অবহিত নয়। অথচ বাংলাদেশ সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যে সকল কর্মসূচি প্রণয়ন করে থাকে তার খুব কমই আদিবাসীদের পেয়ে থাকে। ভিজিএফ কার্ড, ভিজিডি কার্ড, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা তারা কমই পেয়ে থাকে শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে।
আদিবাসীদের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। অথচ তাদের ভূমি নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এদের ভূমি অবৈধভাবে মাসের পর মাস দখল করে রাখে। প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অভাবে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে ধারণা রাখে না। এভাবে দিনের পর দিন আদিবাসীরা নানাভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এখন প্রয়োজন ইউনিয়নভিত্তিক যে সকল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি আছে আনুপাতিক হারে আদিবাসীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা। আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদেরকে আনুপাতিক হারে শিক্ষা উপবৃত্তি বৃদ্ধি করা। ভূমিহীন আদিবাসীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাস জমি বন্দোবস্ত দেওয়া। মোটকথা আদিবাসীদের প্রতি বিশেষ নজর দিয়ে সমাজে সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা আমাদেরই দায়িত্ব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ